বুধবার,১,মে,২০২৪
31 C
Dhaka
বুধবার, মে ১, ২০২৪
Homeসীমানা পেরিয়েনিজের পায়েই কুড়াল মারলেন জাস্টিন ট্রুডো? 

নিজের পায়েই কুড়াল মারলেন জাস্টিন ট্রুডো? 

জি-২০ সম্মেলনেই আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে সরাসরি কিছু একটা হতে যাচ্ছে। সেইসময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে তিরস্কার করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কানাডায় ভারতীয় দূতাবাসের ওপর খালিস্তানপন্থী সমর্থকদের হামলা ও দেশটিতে ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে ট্রুডোকে সরাসরি তার অসুন্তষ্টি কথা জানান মোদি। এরপর ভারত থেকে জাস্টিন ট্রুডো যখন দেশে ফিরলেন সেইসময়ে নির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ না করে কানাডার পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি স্থগিত করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, রাজনৈতিক ইস্যুতে কানাডা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এরপর গত সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রথম বিস্ফোরক দাবি করেন ট্রুডো। পার্লামেন্টে সেইদিন তিনি বলেন, কানাডার শিখ নেতা হারদিপ সিং নিজ্জার হত্যার পেছনে ভারত সরকারের হাত থাকতে পারে।

কানাডার হাউজ অব কমন্সের সভায় ট্রুডো বলেন, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা হারদিপ হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে। ট্রুডোর এমন দাবির পরেই কানাডা ভারতীয় এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে।

অন্যদিকে ট্রুডোর এমন মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় ভারত। তারাও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কানাডার একজন কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। এতেই ক্ষ্রান্ত হয়নি ভারত, গতকাল বৃহস্পতিবার কানাডার নাগরিকদের ভিসা দেওয়া স্থগিত করেছে। সেইসঙ্গে ভারতে কানাডার কূটনীতিবিদের সংখ্যা কমাতে হবে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।

hardeepব্রিটিশ কলম্বিয়ায় গত ১৮ জুন হারদিপকে গুলি করে হত্যা করা হয়

ট্রুডো ভারতের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করার পর খুব করে চাচ্ছিলেন জি-৭ ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট তার পাশে দাঁড়াক। বিশেষ করে একে অপরের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়কারী সংস্থা ফাইভ আইজ ইন্টেলিজেন্স ভারতের বিরুদ্ধে যৌথ বিবৃতিতে নিন্দা জানাক। এই জোটের সদস্য যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ও কানাডা। কিন্তু ট্রুডোর আশায় গুড়েবালি হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে কেউ এখন পর্যন্ত নিন্দা জানায়নি, শুধু বলেছে ট্রুডোর এমন অভিযোগে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

নিউইয়র্ক থেকে বিবিসির কূটনীতিক সংবাদদাতা জেমস ল্যাণ্ডেল তার বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, কানাডা-ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ যেন অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলোর ওপর প্রভাব না ফেলে, এজন্য এখন পশ্চিমা বিশ্বের মন্ত্রী আর কর্মকর্তারা প্রবল প্রচেষ্টা চালাবে।

তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তিগুলো এখন কোনোভাবেই চাইবে না এমন একটা বিরোধ তৈরি হোক যেটি ভারতের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়িয়ে দেবে। বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতির বৃহত্তর দাবার বোর্ডে ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত-কানাডার দ্বন্দ্বে পশ্চিমা শক্তিগুলো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, মূলত চীনের কারণে ভারতের বিরুদ্ধে এ নিয়ে ট্রুডোর অভিযোগে সুর মেলাচ্ছে না পশ্চিমা শক্তিগুলো। এখন চীনকে ঠেকানোর জন্য কানাডা সেই অবস্থানে নেই যা ভারতের আছে। তাই পশ্চিমা শক্তি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

modiদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো (বামে), ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (ডানে)

অটোয়ার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রফেসর স্টেফানি কারভিন বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পশ্চিমাদের হিসাবে ভারত এখন গুরুত্বপূর্ণ, কানাডা নয়। এটি সত্যি কানাডাকে অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে আলাদা করে দিয়েছে।’

বিশ্লেষকদের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে জাপান ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে ভারত বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতি হবে। সেইসঙ্গে দেশটির রয়েছে বিশাল সামরিক বাহিনী। তাই কানাডার ঘনিষ্ঠ দেশগুলোও চাইবে না এখন ভারতের সঙ্গে বিরোধে যোগ দিতে।

যুক্তরাজ্যও এখন ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইছে। তাই দেশটিও কোনোভাবেই চাইবে না ট্রুডোর কারণে তাদের ভারতের সঙ্গে সমস্যা হোক। লন্ডনের চ্যাথাম হাউস থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ভারত বিশেষজ্ঞ চিতিগ বাজপেয়ী বলেছেন, আমার ধারণা ট্রুডোর অভিযোগ নিয়ে যুক্তরাজ্যের সাড়া নিশ্চুপই থাকবে। যুক্তরাজ্য ও ভারত উভয়ের জন্য প্রধান রাজনৈতিক জয় হবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি।

এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো চীনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সুরক্ষা প্রাচীর হিসেবেও ভারতকে দেখে। তাই ভারতের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলে কার্যত একা হয়ে পড়েছেন ট্রুডো। যেন নিজের পায়েই কুড়াল মারলেন।

ভারতের বিরুদ্ধে ট্রুডোর এমন অভিযোগ চীনকে দমাতে পশ্চিমা প্রচেষ্টাকে যেন আরও জটিল করে তুলল। এতে পশ্চিমা শক্তিগুলোর বিষেধাগারে পড়তে পারেন তিনি।

যদিও এরই মধ্যে সুর নরম করেছেন জাস্টিন ট্রুডো। গতকাল তিনি বলেছেন, আমরা উস্কানি দিতে বা সমস্যা সৃষ্টি করতে চাই না। তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, দ্য ডিপ্লোম্যাট

সর্বশেষ