বৃহস্পতিবার,১৮,এপ্রিল,২০২৪
30 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
Homeসীমানা পেরিয়েব্রাজিলে চীনা টিকার সফল পরীক্ষা

ব্রাজিলে চীনা টিকার সফল পরীক্ষা

সীমানা পেরিয়ে ডেস্ক : ব্রাজিলের সেরানা শহরে চীনের করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগে নাটকীয় ফল মিলেছে। এক পরীক্ষার অংশ হিসেবে শহরের প্রায় সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে পুরো ডোজ টিকা দেয়া হয়। গবেষকরা বলছেন, সেখানে এখন কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশ কমে গেছে। করোনাভাইরাসের উপস্থিতি কমে যাওয়ার কারণে যাদের টিকা দেওয়া হয় নি, তারাও সুরক্ষার আওতায় চলে এসেছে। এই পরীক্ষার ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে, জনগোষ্ঠীর শতকরা ৭৫ ভাগকে পুরো ডোজ টিকা দিতে পারলে মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
করোনা মহামারি ব্রাজিলে বিপর্যয়কর রূপ নিয়েছে। দেশটিতে সরকারি হিসাবেই এ পর্যন্ত কোভিডে মারা গেছে প্রায় ৪ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ। যথেষ্ট টিকার ডোজ না থাকায় ব্রাজিল টিকাদান কর্মসূচি চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, ভ্যাকসিনেশন চলছে খুবই ধীর গতিতে। দৈনন্দিন মৃত্যুর সংখ্যা এবং শনাক্তের গড় হারও খুব বেশি। সমন্বিত পদক্ষেপের অভাবে সংক্রমণ কমানোর প্রচেষ্টাও সফল হচ্ছে না।
ব্রাজিলের সাও পাওলো রাজ্যের দক্ষিণ পূর্বের শহর সেরানাতে এই পরীক্ষা চালানো হয় ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে। পরীক্ষা চালায় ইনস্টিটিউটো বুতানতান, যারা চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক কোম্পানি উদ্ভাবিত টিকা করোনাভ্যাক তৈরি করছে ব্রাজিলে।
কিভাবে পরীক্ষা চালানো হয়? : শহরের বাসিন্দাদের ভাগ করা হয় চারটি এলাকার ভিত্তিতে। করোনাভাইরাসের উপস্থিতি বা জীবাণুর পরিমাণ কোন এলাকায় কমছে সেটা নির্ধারণ করতে এই এলাকা ভাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গবেষক দলটি বলছে, ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশকে দুই ডোজ টিকা দেওয়ার পর তিনটি এলাকায় করোনার উপস্থিতি ব্যাপক মাত্রায় কমে গেছে বলে তারা দেখতে পান। যখন প্রাপ্তবয়স্কদের ৯৫ শতাংশকে পুরো ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে যায়, তখন দেখা যায়, মৃত্যুহার কমেছে ৯৫ শতাংশ। হাসপাতালে ভর্তি কমেছে ৮৬ শতাংশ। উপসর্গ আছে এমন রোগী শনাক্তের হার কমেছে ৮০ শতাংশ।
বুতানতান সংস্থার গবেষণা পরিচালক রিকার্ডো পালাসিও বলেছেন, ‘গবেষণার ফলাফল থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা বেরিয়ে এসেছে সেটা হলো গোটা জনগোষ্ঠীকে টিকা না দিয়েও মহামারি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের যে ভ্যারিয়েন্ট প্রথমে পি.১ নামে পরিচিত ছিল, যার এখন নতুন পরিচয় গামা নামে, সেই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও এই টিকা কার্যকর। ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলে অ্যামাজন নদীর তীরের মানাউস শহরে প্রথম এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। তখন থেকে ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্ট নামে পরিচিত হয়ে উঠে করোনার এই স্ট্রেইন। ব্রাজিলে কোভিডের এই ধরনটিকেই দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বাড়ার জন্য দায়ী করা হয়।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন. এই পরীক্ষার ফলাফল চীনা টিকা করোনাভ্যাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষের আস্থা বাড়াবে। সেরানাতে চালানো এই পরীক্ষা পৃথিবীর আর কোনো দেশে চালানো হয়নি। এটাই প্রথম এ ধরনের পরীক্ষা বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এই ভ্যাকসিন থেকে গুরুতর কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ারও খবর পাওয়া যায়নি। এখন ব্রাজিলের আরেকটি শহর বতুসাতুতে একই ধরনের পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। ওই শহরের জনসংখ্যা এক লাখ ৪৮ হাজার। গবেষকরা সেখানে ব্যবহার করছেন অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রজেনেকার ভ্যাকসিন, যেটি ব্রাজিলে উৎপাদন করছে স্থানীয় কোম্পানি ফিয়োক্রুজ ইনস্টিটিউট।

সর্বশেষ