শুক্রবার,২৬,এপ্রিল,২০২৪
38 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Homeসম্পাদকীয়স্মরণার্ঘ্যমাস্টাদা’র ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিক- মৃত্যুতে জ্বালায় চেতনার মশাল

মাস্টাদা’র ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিক- মৃত্যুতে জ্বালায় চেতনার মশাল

বেলাল বাঙ্গালিঃ ভারতবর্ষের নিরবচ্ছিন্ন স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশমাতৃকাকে শোষণের ন্যাগপাশ থেকে মুক্ত করার দীপ্ত শপথ নিয়ে যারা নিজেদের আত্মদানকে মহীয়ান করে তোলেন, সূর্যসেন তাদের অন্যতম। সূর্যকুমার সেন যিনি মাস্টারদা সূর্যসেন নামে পরিচিত।
ডাক নামনে কালু এই মহান বিপ্লবীর জন্ম ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে। এই বাঙালি বিপ্লবী বৃটিশ বিরোধী সশ¯্র সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। সূর্যসেনের বাহিনী কয়েকদিনের জন্য চট্টগ্রাম এলাকা থেকে বৃটিশ শাসনকে নিশ্চহ্ন করে দিয়েছিল। পিতা রাজমনি সেন, মাতা শশীবালা সেন। সূর্যসেন পরিবারের চতুর্থ সন্তান। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফএ পাস করার পর একই কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি মুর্শিদাবাদ কৃষ্ণনার্য কলেজ থেকে চিত্র পাস করেন। পরবর্তিতে তিনি শিক্ষকতায় যোগ দান করেন। এসময়ই তিনি বিপ্লবী দলের সাথে সম্পৃক্ত হন। বাংলায় তখন কৃটিশবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম তুঙ্গে। স্বাধীনতার জন্য মুক্তিপাগল যুবকরা দলে দলে অনুশীলন, যুগান্তর প্রভৃতি দলে যোগ দিতে থাকেন। সুর্যসেন যুগান্তর দলের সদস্য ছিলেন। ১৯১৮ সালে তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রামে এসে বিপ্লবীদের সাথে যোগ দেন। তার সমসাময়িক বিপ্লবীদের মধ্যে বিনোদবিহারী চৌধুরী, গনেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, নির্মল সেন, অন্বিকা চক্রবর্তী, চারুবিকাশ দত্ত, কল্পনা দত্ত, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, নগেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সুর্যসেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা চট্টগ্রাম অস্ত্রগার দখল করে। চট্টগ্রাম সারাদেশ থেকে ৪ দিন বিচ্ছিন্ন থাকে। বিপ্লবীরা দামপাড়া পুলিশ লাইনে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দেয়। রেল লাইন, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ অফিস সহ সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। পরর্বতীতে ইংরেজ সেনাবাহিনীর সাথে প্রচ- যুদ্ধে ১২ জন বিপ্লবী শহীদ হন। সূর্যসেন সহ বিপ্লবীরা আত্মগোপন করেন। পরবর্তীতে বিপ্লবীরা পাহাড়তলী ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করে বেশকিছু বৃটিশকে হতাহত করে। বৃটিশ প্রশাসন সূর্যসেন কে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরার জন্য পুরুস্কার ঘোষণা করে। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সূর্যসেন কয়েকজন বিপ্লবীসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি এক প্রহসনের বিচারে সূর্যসেন ও তার সহযোগী তারকেশ^র দস্তিদারের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মাস্টারদা সূর্যসেন দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য হাসিমুখে ফাঁসির রজ্জু গলায় পরতে পারেন নি। কারণ ফাঁসির পূর্বেই তাদের ওপর নারকীয় নির্যাতন চালানো হয়। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে সূর্যসেন ও তার সহযোগী তারকেশ^রের দাঁত ও নখ উপড়ে ফেলা হয়। তাদের হাড়পাজর চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয় অন্ধ আক্রোশে। সে অবস্থাতেই ফাঁসিতে চড়িয়ে দেয়া হয়। ফাঁসি দেয়ার পর তাদের মৃতদেহ লোহা বেঁধে সাগরে ফেলে দেয়া হয়। সূর্যসেনের আজন্ম তপস্যা ছিল ভারতবর্ষের স্বাধীনতা। ২০০ বছরের বৃটিশশাসনের অক্টোপাশ, নির্মম সিপাহীবিদ্রোহ, কুখ্যাত জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা- প্রভৃতি সূর্যসেনের মনে যে প্রতিশোধস্পৃহার জন্ম দিয়েছিল, তারই স্ফুরণ ঘটেছে চট্টগ্রামের বিপ্লবে। তাদের বিপ্লবী কর্মকা-ে সা¤্রাজ্যবাদী বৃটিশ রাজশক্তির পায়ের নিচের মাটি ক্রমেই সরে যেতে থাকে। কিন্তু তিনি জানতেন তাদের আত্মত্যাগের উপর দাঁড়িয়ে একদিন এই মাটিতে স্বাধীনতার পতাকা উড়বে। শোষকের সব অপশক্তিকে উপহাস করে যুগ যুগ ধরে বিদ্রোহের আগুন জ¦ালাবে অবরুদ্ধ জনপদে। ১২ জানুয়ারি বিপ্লবী সুর্যসেনের ৮৭মত মৃত্যুবার্ষিকী। নতুন কথার পক্ষ থেকে এই অসম সাহসী বিপ্লবীর প্রতি লাল সালাম। সূর্যসেনরা মরেন না। মৃত্যুতেও তারা চেতনার মশাল জ্বালায়।

সর্বশেষ