বৃহস্পতিবার,২,মে,২০২৪
30 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
Homeসম্পাদকীয়উপ-সম্পাদকীয়রাষ্ট্রের চার মূলনীতি: বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের মর্মকথা

রাষ্ট্রের চার মূলনীতি: বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের মর্মকথা

।। ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ।।

( প্রথম পর্ব)

অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন

রাষ্ট্রের মূলনীতি থাকতে পারে, বা সুনির্দিষ্ট চারটি মূলনীতি চার স্তম্ভের রাষ্ট্রকাঠামো ধারণ করতে পারে, এমন একটি ব্যাপার বাস্তবায়িত করে বাংলাদেশ ১৯৭২-এ সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। চারটি মূলনীতি যে শুধু বাচনিক উচ্ছ্বাসে বিরাজ করেছিল তা নয়, ’৭২-প্রণীত সংবিধানেও বিধৃত ছিল। অর্থাৎ চার মূলনীতি রাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রটি শুধু স্বাধীন মানুষের আবাস নয়, বরং হয়েছিল নীতি ও আদর্শভিত্তিক একটি ভূখ-। বাংলাদেশ যে আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র হবে তা পূর্বনির্ধারিত ছিল রাষ্ট্রটির জন্মের ইতিহাসে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রায় আড়াই দশকের লাগাতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পেছনে সুস্পষ্ট নীতি ও আদর্শ ক্রিয়াশীল ছিল বলেই স্বাধীন বাংলাদেশের অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল নীতি ও আদর্শকে পুঁজি করে।
এমন আদর্শিক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দুটো কথা বিবেচনায় রাখা উচিত। এক, বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস যে আদর্শিক ঐতিহ্য নির্মাণ করেছে তার-ই বহি:প্রকাশ ঘটেছিল সূচনালগ্নের বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির মধ্যে। প্রাচীন বাংলার পাল আমল (৭৫০-১১৬১) ছিল এক উজ্জ¦ল অধ্যায়। বৌদ্ধ পাল রাজারা বৌদ্ধ ধর্মকে রাজধর্ম করেন নি; ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত তৈরি করে রাজকোষের অর্থে হিন্দু প্রজাদের জন্য মন্দির গড়ে দিয়েছিলেন। এমন ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বিদ্যমান ছিল স্বাধীন সুলতানি আমলেও (১৩৩৬-১৫৭৬)। নইলে কী আর চৌদ্দ শতকের চারণকবি চন্ডীদাস বলতে পারতেন “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।” এমনকি আঠারো-উনিশ শতকে লালন উপনিবেশ আমলেও বলতে পেরেছিলেন, “নানান বরণ গাভীরে, একই বরণ দুধ/জগত ভরমিয়া দেখিলাম একই মায়ের পুত।” আসলে বাংলার ঐতিহ্যিক পাটাতনে আছে মানববাদ ও বিশ্বজনীনতা। অবশ্য পাল আমলের পরে এসেছিল কট্টর হিন্দু সেন আমল (১১৬১-১২০৪) উগ্রতা ও মানবপীড়ণের হাতিয়ার হয়েছিল ধর্ম। দীনেশচন্দ্র সেন তার বৃহৎ বঙ্গ বইতে এ আমলকে অন্ধকার বলতে বাধ্য হয়েছিলেন। সুতরাং বাংলার ঐতিহ্যে আলো আর আঁধার দুটোই আছে, তবে আলো আছে বেশি। শুরুর বাংলাদেশ পাল ও সুলতানি আমলের আলোর সম্ভাবনা মূর্ত করেছিল; ’৭৫-’৯৬ এবং ২০০১-০৬-এর বাংলাদেশ সেন আমলের আঁধারকে ফিরিয়ে এনেছিল। সাম্প্রতিক বাংলাদেশ আলো-আঁধারের মঞ্চ। আলো আছে; কিন্তু আঁধার যেন আলোকে পরাভূত করতে চায়। তবে এটা ঠিক যে, শুরুর বাংলাদেশ আলোর দিশারী ছিল।
দুই, বঙ্গবন্ধু বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের আলোর প্রতিনিধি ছিলেন। বাংলা ও বাঙালিলগ্ন মানুষটি বাংলার শাশ্বত মানববাদ আর বিশ্বজনীমতা আতœস্থ করেই তার রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্মাণ করেছিলেন। পাকিস্তানি কারাগারের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ রেসকোর্স ময়দানে বলেছিলেন, “ফাঁসির মঞ্চে যাবার সময় বলবো আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ। বাংলার মাটি আমার স্থান।” কারাগারের রোজনামচা-য় শুনি তার নিনাদিত কণ্ঠস্বর: “একজন মানুষ হিসেবে আমি গোটা মানবজাতি নিয়েই চিন্তিত। একজন বাঙালি হিসেবে বাঙ্গালিত্বের সাথে সম্পৃক্ত সবকিছুই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। আমার এই নিরন্তর সম্পৃক্ততার পেছনে রয়েছে ভালবাসা, অক্ষয় ভালবাসা, এই ভালোবাসা আমার রাজনীতি ও অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।” আলজিয়ার্স চতুর্থ জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে (৫-৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩) তার দুনিয়া কাঁপানো উচ্চারণ ছিল, “বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত-শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।” যে মানুষ চার মূলনীতি তার দেশের সংবিধানে উৎকীর্ণ করতে পারেন, তার মনের মানচিত্র ছিল এমনই। এমন মন না থাকলে এমন নীতি-ধারণা হতে পারে না। বিশ্বের তাবৎ অযান্ত্রিক ঘটনাগুলো মানবীয়; আর মানবীয় সব কাজের উৎস তার মন। তাই মনের জানালা খুলে ভেতরে উঁকি না দিলে ঘটনার মর্মার্থ/তাৎপর্য অনুভূত হয় না। তাই ইতিহাস-দার্শনিক হেগেলের দৃষ্টিতে All historical facts are psychological. যে বঙ্গবন্ধু থেকে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির উৎসারণ সে বঙ্গবন্ধুর মনের জানালা খুলে দেয় উপর্যুক্ত উক্তিগুলো। ঠিক এ কারণে মার্কিন জীবনীকার বিল এ্যাডলার বলেন, “Nothing describes a person better than his words”. বঙ্গবন্ধুকে চিনতে হয় তার কথা দিয়ে; যেমন সব মানুষকে চিনতে হয় তাদের কথা দিয়ে।
চার মূলনীতির প্রেক্ষাপটের কথায় আসা যাক। ১০ এপ্রিল ১৯৭২, মুজিবনগর সরকার ঘোষণা করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, যার মুসাবিদা করেছিলেন ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম; আর যেখানে মুক্তিযুদ্ধের অভিন্নলক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার, যার কোনোটিই আজো বাংলাদেশে অর্জিত হয় নি। মনে হয়, এ তিনটি অভিলক্ষ্য সংবিধানে অঙ্গীভূত হওয়া উচিত ছিল। অবশ্য ’৭২-এর সংবিধান পাঠ এ ধারণা দেয় যে, তিনটি দিকনির্দেশনার বিস্তারণ ঘটেছে নানা ধারায়। তবুও মনে হয়, এমন অভিলক্ষ্যের সুস্পষ্ট উল্লেখ কাম্য ছিল। উপরন্তু, এটা বলা সঙ্গত যে, ঘোষণাটি নির্মীয়মান বাংলাদেশের আদর্শিক বৈশিষ্ট্যের আভাস ছিল।
বঙ্গবন্ধুর ১০ জানুয়ারির ভাষণটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের পথনির্দেশ বা রোডম্যাপ। এ ভাষণে ছিল মন্দ্রিত উচ্চারণের বজ্রকণ্ঠ: “আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই। বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে, যার ভিত্তি কোনো ধর্মীয়ভিত্তিক হবে না। বাংলাদেশের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।” আর ১২ অক্টোবর ১৯৭২, বাংলাদেশ গণপরিষদে তিনি বললেন, “আমাদের আদর্শ পরিষ্কার হয়ে রয়েছে। এই পরিষ্কার আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ স্বাধীন; এবং সে আদর্শের ভিত্তিতে এদেশ চলবে। জাতীয়তাবাদ-বাঙালি জাতীয়তাবাদ-এই জাতীয়তাবাদ চলবে বাংলাদেশে। বাংলার কৃষ্টি, বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার আকাশ-বাতাস, বাঙালির রক্ত দিয়ে বাংলার জাতীয়তাবাদ।” উল্লেখ্য, ১০ জানুয়ারি ভাষণে বলা হয়েছিল তিনটি নীতির কথা, যার পুনরক্তি এ ভাষণে করে বঙ্গবন্ধু বললেন, “এ চারটি আদর্শের ভিত্তিতে বাংলার শাসনতন্ত্র তৈরি হবে। এটা জনগণ চায়, জনগণ এটা বিশ্বাস করে। জনগণ এইজন্য সংগ্রাম করেছে, লক্ষ লক্ষ লোক এইজন্য জীবন দিয়েছে। এই আদর্শ নিয়েই বাংলার নতুন সমাজ গড়ে উঠবে, সোনার বাংলা গড়ে উঠবে। সোনার মানুষ ছাড়া সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।” লক্ষণীয়, গণআকাঙ্খার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে বঙ্গবন্ধু তার আদর্শিক উচ্চারণ করেছিলেন। গণসম্পৃক্ততা না থাকলে, গণমানস আত্মস্থ না করলে জননেতা হওয়া যায় না। ৪ নভেম্বর, গণপরিষদে সংবিধানের চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপিত হলে জাতীয়তাবাদসহ মৌলিক চার নীতি নির্দিষ্ট করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেদিন ১২ অক্টোবরের ভাষণের মতো চার নীতি ব্যাখ্যা করেছিলেন (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আরবি শব্দ ‘মুজিব’ মানে ‘ব্যাখ্যাকারি’ তিনি আজীবন বাঙালির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত ব্যাখ্যা করেছেন)।
২০১৬-র এপ্রিল মাসে মুদ্রিত সংবিধানে “রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি” শিরোনামে ৮(১) ধারায় বলা হলো, “জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা – এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে।” ৮ (২) ধারায় বলা হলো, “এই ভাগে বর্ণিত নীতিসমূহ বাংলাদেশ পরিচালনার মূলসূত্র হইবে, আইন প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তাহা প্রয়োগ করিবেন, এই সংবিধানও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে তাহা নির্দেশক হইবে এবং তাহা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কার্যের ভিত্তি হইবে, তবে এই সকল নীতি আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হইবে না।” লক্ষণীয়, মূলনীতিসমূহকে রাষ্ট্রীয় কর্মকা-ে অগ্রগণ্য করেও, তার কোনো আইনি ভিত্তি দেয়া হয় নি। কাজটি বাস্তব ও দুরদর্শী ছিল। আইনি ভিত্তি থাকলে বিস্তর মামলা-মোকদ্দমার আশঙ্কা থাকতো। এবার আসা যাক চার মূলনীতির বিশদ আলোচনায়।
জাতীয়তাবাদ
সংবিধানের ৯ ধারায় বলা আছে, “ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্ত্বাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।” ১২ অক্টোবর ও ৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু দু’দফায় গণপরিষদে চার মূলনীতি ব্যাখ্যা করেছিলেন; তবে দ্বিতীয়বার আরো বিশদভাবে। তার বক্তব্য ছিল জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল চরম মরণ-সংগ্রামে। জাতীয়তাবাদ না হলে কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। . . . আমরা জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। জাতীয়তাবাদের অনেক সংজ্ঞা আছে। অনেক ঋষি, অনেক মনীষী, অনেক বুদ্ধিজীবী, অনেক শিক্ষাবিদ এ সম্পর্কে অনেক রকম সংজ্ঞা দিয়েছে। . . . আমি শুধু বলতে পারি আমি বাংলাদেশের মানুষ, আমি [আমরা] একটি জাতি।
এই যে জাতীয়তাবাদ, সে সম্পর্কে আমি একটা কথা বলতে চাই। ভাষাই বলুন, শিক্ষাই বলুন, সভ্যতাই বলুন, আর কৃষ্টিই বলুন-সকল কিছুর সঙ্গে একটা জিনিস রয়েছে। সেটা হল অনুভূতি, এই অনুভূতি যদি না থাকে তাহলে কোনো জাতি বড় হতে পারে না। এবং জাতীয়তাবাদ আসতে পারে না। অনেক জাতি দুনিয়ায় আছে, যারা বিভিন্ন ভাষাবলম্বী হয়েও এক জাতি হয়েছে। অনেক দেশ আছে, একই ভাষা, একই ধর্ম, একই সবকিছু নিয়ে বিভিন্ন জাতি গড়ে উঠেছে-তারা এক জাতিতে পরিণত হতে পারে নাই। জাতীয়তাবাদ নির্ভর করে অনুভূতির উপর।
লক্ষণীয়, বঙ্গবন্ধুর মোদ্দা কথা ছিল দুটো। এক, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাঙালির সংগ্রামে চালিকাশক্তি ছিল; তাই জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতেই স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাঙালির ঐক্য-সংহতি ধরে রাখতে হবে। সুতরাং মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি। দুই, জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত বিশাল বয়ানের নির্যাস তুলে এনেছেন বঙ্গবন্ধু যখন তিনি বলেন, “জাতীয়তাবাদ নির্ভর করে অনুভূতির উপর।” এজন্য বেনেডিক্ট এন্ডারসন জাতীয়তাবাদী মানুষকে বলেছেন “imagined community”-কল্পিত জনগোষ্ঠী। বঙ্গবন্ধু যে জাতীয়তাবাদ ধারণ ও লালন করেছিলেন, তা ছিল অন্তর্ভূক্তিমূলক (inclusive); তাতে ছিল না কোন বিদেশি-বৈরিতা (xenophobic)-এবং তা ছিল আন্তর্জাতিকতাবাদের পাটাতন। নইলে কেন তিনি বলবেন, “বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত-শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।” (আলজিয়ার্স জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলন, ৫-৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩)। অবশ্য বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর অতি উৎসাহী এবং মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ করার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ভুল বার্তা পেয়েছিল। রক্ত ঝরেছিল প্রায় আড়াই দশক। ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭-র শান্তি সমঝোতা (Peace Accord) মোটামুটি শান্তি এনেছে; তবে যথার্থ শান্তি এখনো সুদূরপরাহত। অন্যদিকে জিয়াউর রহমান বাঙালি জাতীয়তাবাদ হটিয়ে প্রবর্তন করলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নামের উদ্ভট এক ব্যাপার। তার হয়তো জানা ছিল না জাতীয়তাবাদ রাতারাতি তৈরি যায় না। জাতীয়তাবাদের বিবর্তন হয় যুগ যুগ ধরে। জাতিসত্তার প্রশ্নে আমরা বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা; কিন্তু নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশি। নাগরিকত্ব ও জাতীয়তাবাদ সমার্থক নয়। কিন্তু জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে দেশে বাঙালি ও বাংলাদেশি বিভাজন আছে। কাজেই উদ্ধৃত করতে হয় K.R. Minogu-র বই Nationalism থেকে। বইটি শুরুর বাক্যটি চমৎকার: “Nationalism . . begins like a fairy tale, ends like Frankenstein’s Monster” জাতীয়তাবাদের শুরু হয় রূপকথার মতো; সমাপ্তি হয় ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবের মতো। এমন উক্তির প্রকৃষ্ট উদাহারণ তো বাংলাদেশ।

(চলবে…..)

লেখক: বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল্স

(আগামী পর্বে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা)

সর্বশেষ