শুক্রবার,২৬,এপ্রিল,২০২৪
28 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Homeসীমানা পেরিয়েশিক্ষাতেও বাংলাদেশ হতে চায় পাকিস্তানিরা

শিক্ষাতেও বাংলাদেশ হতে চায় পাকিস্তানিরা

পাকিস্তানে প্লেবয় ইমরান খানের ধর্মপ্রীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অর্থনৈতিক অগ্রগতির পর এবার পাকিস্তানিদের মুখে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসা। এর আগে দেশটির অর্থনীতিবিদরা ইমরান খানকে যেমন ‘কানাডা নয় বাংলাদেশ’ বানিয়ে দেওয়ার আহ্বান করেছিলেন, তেমনি শিক্ষাক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন সে দেশের শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, “পাঠ্যক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হোক।”
জানাগেছে, পাকিস্তানে শিক্ষাব্যবস্থা আরো ইসলামীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে ইমরান খানের সরকার। তবে এর বিরোধীতা করে দেশটির প্রগতিশীল ও উদার চিন্তাবিদরা বলেছেন, “এমনিতেই পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থা ধর্মমুখী। ইমরান খান যে উদ্যোগ নিয়েছে এতে পাকিস্তান আরো পশ্চাদমুখী হয়ে পড়ছে। সমাজে ধর্মীয় বিভাজন আরো বাড়বে। মোট কথা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এ পদক্ষেপে শিক্ষাব্যবস্থা দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” তাই তারা পাঠক্রম প্রণয়নে বাংলাদেশকে অনুসরণের পক্ষে মত দিয়েছেন।
’৪৭-এ স্বাধীনতার কয়েক বছর পরই পাকিস্তানের শাসকরা শিক্ষাব্যবস্থা ইসলামীকরণের উদ্যোগ নেন। এই প্রবণতা ’৫০-এর দশকে কিছুটা বেড়ে ষাট ও সত্তরের দশকে তা আরো বাড়তে থাকে। ’৮০-র দশকে সামরিক শাসক জিয়াউল হকের সময় ব্যাপকতা লাভ করে। ’৮৮-তে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত জিয়াউল হক পাঠ্যপুস্তক শুধু ইসলামীকরণ’ই করেন নি, বেশ কিছু ক্ষেত্রে ইসলামী আইনও চালু করেছেন। বিচারবিভাগ ও সরকারি চাকুরিতে ইসলামপন্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন। সারা দেশে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়তে কেবল উৎসাহ’ই দেয়নি, সাহায্যও করেছেন। তবে শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নের দাবি বরাবরই উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই মুসলিম প্রধান দেশটিতে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থাকে একমুখি করার দাবিও উঠেছে বার বার। কিন্তু তা বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ ২০১৮ সালে শিক্ষাব্যস্থাকে একমুখি করার অঙ্গীকার করে। আশা করা হয়েছিল, এর মাধ্যমে পাঠ্যসূচিতে বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলার মতো চলতি বিশ্বের জন্য অধিকতর প্রযোজ্য বিষয়গুলোর গুরুত্ব বাড়বে। কিন্তু ২০১৯ সালে ইমরান খান সরকার যে পরিকল্পনা ঘোষণা করে, তাতে ধরা পড়ে উল্টো চিত্র। দেখা যায়, পাশ্চাত্যের শিক্ষায় শিক্ষিত সাবেক ক্রিকেটার ও ‘প্লেবয়’ ইমরান খান পাঠক্রমে ধর্মের প্রভাব আরো বাড়ানের পথে হাঁটছেন। করোনা সংকটের কারণে এতদিন নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘একমুখী’ করার কাজ দৃশ্যত শুরু হয় নি। তবে অচিরেই সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বই ছাপার কাজ শেষ। সেখানে ইংরেজি, উর্দু, সামাজিক শিক্ষাসহ সব বিষয়েই ইসলামীকরণের জোর প্রয়াস দেখতে পাচ্ছেন শিক্ষাবিদরা।
প্রথম ধাপে প্রাথমিক শিক্ষায় মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরান শরীফ পুরোপুরি পাঠ করা বাধ্যতামূলক করা হবে। সঙ্গে নামাজ পড়া এবং বেশকিছু হাদিস মুখস্ত করাও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব পরিকল্পনা কার্যকর করতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত দু’জন সনদপ্রাপ্ত হফেজকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ইসলামাবাদ ভিত্তিক শিক্ষাবিদ আবদুল হামিদ নায়ার মনে করেন, ইমরান খান সরকারের শিক্ষাব্যবস্থাকে ইসলামীকরণের এ উদ্যোগ সমাজে জাতিগত বিভেদ আরো বাড়াবে।
লাহোরের মানবাধিকার কর্মী পিটার জ্যাকব বলেন, ইমরান খান সরকার পাঠক্রমে শতকরা অন্তত ৩০ ভাগ ইমলামি কনটেন্ট রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে অনেকে এর বিরুদ্ধে আদালতে দ্বারস্থ হওয়ার কাথা জানিয়েছেন।
অর্থনৈতিক সমালোচনার মতো পাকিস্তান সরকারের এ পদক্ষেপেরও সমালোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের কথা। অর্থনীতিতে অনেক এগিয়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের মুখে বাংলাদেশের প্রশংসা অতীতে বেশ অনেকবারই শোনা গেছে। এবার শিক্ষাব্যবস্থার বিষয়েও বাংলাদেশের প্রশংসা করলেন মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের (এমকিউএম) সংসদ সদস্য কিশোয়ার জোহরা। সরকারের শিক্ষানীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে উৎসাহিত করা হয়। আমাদের উচিত বাংলাদেশের অনুকরণ করা।’ উল্লেখ্য, কিশোয়ার জোহরার দল এমকিউএম ইমরান খান সরকারের জোটসঙ্গী। অর্থাৎ জোটের মধ্যেই এ নিয়ে রয়েছে মতবিরোধ।

সর্বশেষ