শুক্রবার,২৬,এপ্রিল,২০২৪
38 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Homeনারী কথানোয়াখালীতে ফের বিবস্ত্র গৃহবধু

নোয়াখালীতে ফের বিবস্ত্র গৃহবধু

দুর্বৃত্তায়নের শেষ কোথায়!

নতুন কথা প্রতিবেদন : গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর একলাশপুরে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ঘটনার ৩২ দিন পর তা গণমাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে জনসাধারণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ তৈরি হয়। সেই নোয়াখালীতেই আবারো দুর্বত্তদের হাতে বিবস্ত্র হলেন আরেক গৃহবধু। গত ১ জানুয়ারি জেলার হাতিয়া উপজেলায় ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে এক গৃহবধুকে তার সন্তানদের সামনে বিবস্ত্র করে ওই দুর্বৃত্তের দল। যার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নির্যাতিত গৃহবধু আদালতে মামলাও করেছেন। নোয়াখালী যেন দৃর্বৃত্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। যতই প্রতিবাদ হচ্ছে, ততোই তারা বেপরোয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ নারী নির্যাতন, সহিংসতা, ধর্ষণ , উত্ত্যক্ত করা অতীতেও ছিল বর্তমানেও আছে। তবে সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে ধর্ষণের মাত্রা’ই কেবল বাড়ে নি, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা নির্যাতন। দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, পাশবিক নির্যাতনের পর রক্তক্ষরণে মৃত্যুর মত নারকীয় বর্বরতা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সব বয়সের নারী। শিশু, কিশোরী, যুবতী, বৃদ্ধা, বিবাহিত-অবিবাহিত এমনকি প্রতিবন্ধীদেরও রেহাই নেই। অন্যদিকে ধর্ষকরূপে অবতীর্ণ সবশ্রেণীর সব বয়সের পুরুষ নামের নরপশু। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ঘটনায় জড়িত বখাটে, মাদকাসক্ত কিশোর বা তরুণরা।
নোয়াখালীর একলাশপুরে বা হাতিয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে তাতে দেশের সমাজের এক চরম অবক্ষয়ের চিত্রই ফুটে ওঠে। মনে হচ্ছে তারা সরকার, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা কাউকেই তোয়াক্কা করে না। এতে সারাদেশের নারীর সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার করুণ চিত্র ফুটে ওঠে।
বেগমগঞ্জের সেই ঘটনার আসামীরা ওই নারীকে দিয়ে মাদকের কারবারসহ নানা অসামাজিক কার্যক্রম চালাতে চেয়েছিল। তারা ঐ নারীকে নানা প্রলোভন ও চাপ দিয়ে আসছিল। কিন্তু ঐ নারী তাতে রাজী না হওয়ায় তারা তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যতন কর। হাতিয়ার ঘটনায়ও আসামীদের সঙ্গে নির্যাতিত নারীর পরিবারের সম্পত্তির বিরোধ থাকার তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
নোয়াখালীতে সংঘটিত এহেন বর্বরতার চিত্র কোন সভ্য সমাজের চিত্র হতে পারে না। পরিবার, সমাজ, ধর্ষক ও প্রভাবশালীদের ভয়ে অনেকে আদালতে মামলা দূরে থাক, সামাজিকভাবেও বিচার চাইতে পারেন না, আবার কোথাও কোথাও স্বামী বা নিকটজনদের ইন্ধনেই নারী ধর্ষণ, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশ্ন তুলতে হবে আমাদের সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থার দিকে। কারণ সামাজিক ও পরিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও নারী বিদ্বেষ ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। দেশে ধর্মীয় উম্মাদনা ও ধর্ষণ যেন পাল্লা দিয়ে ছুটে চলছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। দেশের প্রশাসন ও আইন ব্যবস্থা কি নারীদের সুরক্ষিত রাখতে, নিরাপত্তা দিতে, ন্যায়বিচার পেতে যথাযথ বা সক্রিয় ভূমিকা রাখছে? অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা নিতে চায় না বরং তারা ভুক্তভোগীকে হয়রানি করে। আবার মামলা হলেও আসামিরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা তো আছেই। আসামীরা জামিনে মুক্ত হলেই ভুক্তভোগীর ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। নি¤œ আদালতে দ- হলেও উচ্চ আদালতে জামিন পেয়ে যায় অনেক আসামী। ফলে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদা ছাড়া উপায় থাকে না। বিচারহীনতা, সামাজিক অসাম্মান ও হতাশা থেকে অনেক নারী বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ে নারীরা সম্মানজনক পদে অবস্থান করছেন। আমাদের রাষ্ট্রীয় ও জাতীয়, অর্থনৈতিক নানা সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সেই সাথে যদি মানসিকতার বিকাশ না ঘটে নারীরা যদি সুরক্ষিত না থাকে, অপরাধীরা যদি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে দাবিয়ে বেড়ায় তাহলে উন্নয়ন অর্থবহ হয় না। কেবল কংক্রিট উন্নয়ন নয় চাই মানবিক উন্নয়ন। উন্নয়নের জন্য মানুষ নয় বরং মানুষের জন্যই উন্নয়ন।

সর্বশেষ