শুক্রবার,২৬,এপ্রিল,২০২৪
31 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Homeঅনুসন্ধিৎসাপ্রতিবেশবিপদজ্জনক মাত্রায় বাড়ছে বায়ু ও শব্দ দূষণ!

বিপদজ্জনক মাত্রায় বাড়ছে বায়ু ও শব্দ দূষণ!

* কমছে গড় আয়ু * বায়ু দূষণে শীর্ষে ঢাকা

* মানা হচ্ছে না শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা

বেলাল বাঙালি: ‘দূষণ’-বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা। দূষণের কবলে বিপর্যস্ত মানুষ। বাড়ছে রোগ-ব্যধির পরিমাণ। নদী দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ ও পরিবেশ দূষণসহ নানা দূষণের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে যেমন মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, তেমনি ধাপে ধাপে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন মানুষ। সাম্প্রতিককালে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণের মাত্রা। ক্রমেই তা বাড়ছে। দেশের প্রায় সব শহরেই বায়ু ও শব্দ দূষণ বাড়ছে। তবে রাজধানী ঢাকায় শব্দ দূষণ যেমন অদৃশ্য দানবে পরিণত হচ্ছে, তেমনি সারা বিশ্বের মধ্যে বায়ু দূষণে শীর্ষ অবস্থানে আছে এই তিলোত্তমা নগরী-এই ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক বায়ুমান সূচক (একিউআই) এর জরিপ প্রতিবেদনে। এতে জনস্বাস্থ ও পরিবেশ পড়েছে ভায়াবহ হুমকির মুখে। দূষণের মাত্রা রোধ করতে না পারলে রাজধানী ঢাকা অচিরেই পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণতি হবে-বলছেন বিশ্লেষকরা।
‘একিউআই’-এর জরিপ অনুযায়ী যেখানে সূচক ৩০০ পেরুলে দূর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি সেখানে ঢাকার দুষণের মাত্রা ৫০২। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির মতে, রাসায়নিক মিশ্রন আছে এমন দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে থাকলে চোখ কান বা গলায় সংক্রমণ বা ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেই সাথে ফুসফুসের নানা সংক্রমণ যেমন নিউমোনিয়া, মাথাব্যাথা, এ্যাজমা ও নানাবিধ এলার্জিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। দূষণের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ডায়াবেটিকেরও –অভিমত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। একিউআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশে^র এক চতুর্থাংশ মানুষ বাস করে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান নেপালে। এই চার দেশে দূষণের মাত্রাও বেশি। প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বিশে^র সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের দেশ বলে আখ্যায়িত করা হয়। যেখানে মহামারির তুলনায় নানাবিধ দূষণেই বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে।
স্টামফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের এক গবেষণায় জানা যায় ঢাকা শহরের গাছপালায় প্রতিদিন ৪৩৬ টন ধুলিকনা জমে। ঢাকার ৪ টি পার্ক ও উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির ৭৭ টি গাছের পাতা সংগ্রহের পর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। পরিবেশ মন্ত্রণালয় বায়ু দুষণের ২০ টি কারণ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো ইটভাটা, রাস্তা নির্মাণ, পুননির্মাণ, মেরামত, উন্নয়ন প্রকল্প, গৃহস্থলি বর্জ্য, বর্জ্য পোড়ানো, ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিস্কার, ফিটনেসবিহীন গাড়ির ধোঁয়া, অধিক সালফার যুক্ত ডিজেল ব্যবহার প্রভৃতি।

অন্যদিকে রাজধানীর শব্দদূষণের মাত্রাও ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ক্ষমতাবলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ প্রণয়ন করা হয়। এই বিধিমালার আওতায় আবাসিক, মিশ্র, বণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মান মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবল, রাতে ৪০ ডেসিবেল নির্ধারণ করে আইন করা হয়। অথচ কেউই এই আইনের তোয়াক্কা করছে না। এমনকি স্কুল,কলেজ, হাসপাতালের মত স্পর্শকাতর স্থানেও নির্বিচারে হর্ণ বাজানো হয়। উচ্চ শব্দে শিক্ষার্থী, রোগী, বৃদ্ধ ও দুর্বল মানুষদের জীবনে এক নারকীয় অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। শব্দ দূষণের মাত্রা বাড়ছে দেশের অন্যান্য শহরেও। চিকিৎসকরা বলছেন, শব্দ দূষণের ফলে মানুষের শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে কমে যায়। এছাড়া শিশুদের পাড়াশোনায় বিঘœ ঘটে। আলসার, মাথাব্যাথা, ¯œায়ুবিক সমস্যা, মানসিক চাপও বাড়ে। ঢাকা মহানগরীতে শব্দের মাত্রা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ৩/৪ গুণ বেশি। মহানগরীতে শব্দদূষণের প্রধান উৎস হচ্ছে গাড়ির বেপরোয়া থেকে সৃষ্ট শব্দ। যেসব এলাকায় শব্দদূষণ বেশি, সেখানকার বাসিন্দা, দোকানদার-ব্যবসায়ী, কর্মরত ট্রাফিক এবং পরিবহন শ্রমিকদের চিকিৎসকের কাছে যেতে দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দদূষণ সম্পর্কে মানুষের সাধারণজ্ঞানের অভাব রয়েছে। বিরক্তিকর উচ্চমাত্রায় শব্দ শারিরীক ও মানসিক জটিলতার সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত শব্দ দূষণে অনেকেই শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। এমনকি কানের পর্দাও ফেটে যেতে পারে। উল্লেখ্য রমনা বটমূল ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় বহু লোকের কানের পর্দা ছিঁড়ে গিয়েছিল। দেশে প্রতিবছর ৩-৪ লক্ষ নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। ক্রমবর্ধমান যানবাহনে অহেতুক উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো সম্পর্কে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না।
বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণ মানবসৃষ্ট ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য একটি পরিবেশগত সমস্যা। ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে মুক্তি ও জনস্বাস্থ্যে সুরক্ষার স্বার্থে এখনই এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সামগ্রিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে জাতি হিসেবে আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ভয়াবহ অবস্থায় পড়ে এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। নানাবিধ দূষণ ক্রমেই জীবন ও সভ্যতা বিনাশী হয়ে উঠছে। তাই দূষণ থেকে নিস্তার পাওয়া এখনই অতীব জরুরি হয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ